
সর্বনাশ ডেকে আনছে তামাক
- আপলোড সময় : ১৪-০৮-২০২৫ ০৪:২৬:২৪ অপরাহ্ন
- আপডেট সময় : ১৪-০৮-২০২৫ ০৪:২৬:২৪ অপরাহ্ন


একটি সিগারেট কেড়ে নিচ্ছে ২০ মিনিট আয়ু তামাকজনিত রোগে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মৃত্যু
তামাকের বিষে নীল হয়ে উঠেছে দেশের প্রতিটি জনপদ। এতে ডেকে আনছে সর্বনাশ। নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে দেশের নানা জনগোষ্ঠীর মানুষ। এরই মধ্যে উজাড় হয়ে গেছে হাজার হাজার একর বনভূমি। শীতকালীন সবজির চাষ বাদ দিয়ে মাঠে মাঠে তামাকের চারা উৎপাদনের মহোৎসবে মেতেছেন প্রান্তিক চাষিরা। তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ হয়ে ঋণের বোঝা নিয়ে ভিটেমাটি হারিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেকে। নির্বিকার জেলা প্রশাসন আর পরিবেশবাদী সংগঠন। কারও যেন কোনো দায় নেই। সমতল থেকে পাহাড়চূড়া, সবই তামাকের দখলে। তামাক চাষের প্রসার নিয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে সচেতন মহল। তাই এখনই পরিবেশবিধ্বংসী তামাক চাষ বন্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা না হলে আবাদি জমি হ্রাস পেয়ে অচিরেই খাদ্যনিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়বে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন উপেক্ষা করে কোম্পানিগুলোর প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে চলতি মৌসুমে যে চাষ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, তা বন্ধ করতে হবে সরকারকেই। বিশেষ করে তামাক কোম্পানিগুলোর টুঁটি টিপে না ধরতে পারলে এ অপরাধ চলতেই থাকবে।
এদিকে, তামাকজনিত রোগে দেশে বছরে ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষের মৃত্যু হয় বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল ও রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী। গতকাল বুধবার রাজধানীতে ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের সহযোগিতায় আয়োজিত ‘জনস্বার্থ বনাম তামাক কোম্পানির প্রভাব: তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন ত্বরান্বিতকরণে সাংবাদিকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনের সময় তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি। এ সময় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরাম জানিয়েছে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনে তামাক কোম্পানির মতামত নেওয়া সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। তবে সংগঠনটির দাবি, এ ধরনের পদক্ষেপ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের আর্টিকেল ৫.৩-এর সরাসরি লঙ্ঘন এবং দেশের জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকি।
ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী জানান, তামাক হৃদরোগ, ক্যানসার ও শ্বাসতন্ত্রের নানা রোগের অন্যতম প্রধান কারণ। প্রতি বছর বাংলাদেশে ১ লাখ ৬১ হাজারের বেশি মানুষ তামাকজনিত রোগে মারা যায় এবং ৪ লাখ মানুষ পঙ্গুত্ব বরণ করে। প্রতিদিন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন। বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সভাপতি রাশেদ রাব্বি বলেন, প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ তামাকজনিত কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন। এটি প্রতিরোধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন দ্রুত সংশোধন করা জরুরি হলেও সরকার নানা অজুহাতে গড়িমসি করছে, বরং স্টেকহোল্ডার মিটিংয়ের নামে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তা ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’র সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। কর্মশালায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকরা বলেন, ডব্লিউএইচও ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল-এফসিটিসি’র আর্টিকেল ৫.৩ অনুযায়ী তামাক কোম্পানিকে নীতি প্রণয়ন বা সংশোধন প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত করা যাবে না। অথচ ১৩ জুলাই উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে খসড়া সংশোধনী নিয়ে তামাক কোম্পানির মতামত গ্রহণের সিদ্ধান্ত হয়েছে, যা জনস্বার্থের পরিপন্থি। এ সময় অনুষ্ঠানে ছয়টি সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তাবিত বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি সংশোধনী হচ্ছে-ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বাতিল করে শতভাগ পাবলিক প্লেস ও গণপরিবহন ধূমপানমুক্ত করা। তামাক বিক্রয়কেন্দ্রে পণ্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা। তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা। ই-সিগারেটসহ নতুন তামাকজাত পণ্যে কিশোর ও তরুণদের প্রবেশ রোধ করা। প্যাকেট ও কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা। বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা ও মোড়কবিহীন ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রি নিষিদ্ধ করা। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্পের উপদেষ্টা নাইমুল আজম খান, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার, সিনিয়র কমিউনিকেশনস অফিসার আবু জাফর, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিনিধি।
একটি সিগারেট কেড়ে নিচ্ছে ২০ মিনিট আয়ু: ডাক্তারদের ধারণার চেয়েও বেশি আয়ু কমিয়ে দেয় সিগারেট। সিগারেটের ক্ষতি সম্পর্কে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, একটি সিগারেট একজন মানুষের জীবন থেকে ২০ মিনিট কেড়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের গবেষকরা বলছেন, গড়ে একটি সিগারেট একজন মানুষের জীবন থেকে ২০ মিনিট কেড়ে নেয়। যার মানে ২০টি সিগারেটের একটি প্যাকেট একজন মানুষের আয়ু প্রায় সাত ঘণ্টা কমিয়ে দিতে পারে। বিশ্লেষণ বলছে, একজন ধূমপায়ী যদি ১ জানুয়ারি দিনটিতে ১০টি সিগারেট খাওয়া ছেড়ে দেন, তাহলে ৮ জানুয়ারির মধ্যে তিনি পুরো একটি দিনের জীবন হারানো ঠেকাতে পারেন। আর জানুয়ারির প্রথম দিন থেকে আগামী ৫ আগস্ট সিগারেট পর্যন্ত বন্ধ থাকলে পুরো এক মাস আয়ু বাড়তে পারে। আর পুরো বছর এভাবে ধূমপান ছাড়া থাকলে তারা ৫০ দিনের আয়ু কমে যাওয়া এড়াতে পারেন। ইউসিএল’র অ্যালকোহল অ্যান্ড টোব্যাকো রিসার্চ গ্রুপের প্রিন্সিপাল রিসার্চ ফেলো ড. সারাহ জ্যাকসন বলেন, মানুষ সাধারণত জানে যে ধূমপান ক্ষতিকর, কিন্তু তারা এটিকে অবমূল্যায়ন করে। গড় হিসাবে ধূমপায়ীরা যারা জীবনভর এটি চালিয়ে যান, তারা প্রায় ১০ বছর আয়ু হারান।
সূত্রে জানা গেছে, দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের একাধিক কর্তাব্যক্তি সরাসরি তামাক চাষের সঙ্গে জড়িত। এদের কেউ কেউ মাঠে চাষ করছেন। আবার অনেকে প্রান্তিক চাষিদের টাকা দিয়ে তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করছেন। তামাক চাষ বন্ধে কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠন এবং সচেতন সুশীল সমাজের পক্ষ থেকে বারবার মাইকিং করা হলেও তামাক কোম্পানিগুলো আমলে নিচ্ছে না। কোম্পানিগুলো প্রান্তিক চাষিদের মোটা অঙ্কের ঋণ দিয়ে তামাক চাষ করাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তবে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ড. আইনুন নিশাত বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশ্বে এমনিতেই এক ধরনের অস্থিরতা কাজ করছে। পরিবেশের জন্য তামাক খুবই ক্ষতিকারক। বিভিন্ন জনপদে যে বিশুদ্ধ বাতাস ছিল, তাতে আজ নিকোটিনের গন্ধ। তামাক চাষ করে জটিল রোগে আক্রান্ত হলেও রংপুর অঞ্চলে এর চাষ বেড়েই চলেছে। অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক দাম বেশি থাকায় এ অঞ্চলের কৃষকদের তামাক চাষ থেকে বিরত রাখা যাচ্ছে না। অন্য ফসল চাষ না করে শুধু তামাক চাষে উৎসাহের কারণে ‘বার্জাস’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে লোকজন। এ রোগে আক্রান্ত হলে হাত ও পায়ে ক্ষত দেখা দেয়। দ্রুত পচনশীল এ রোগের চিকিৎসায় অধিকাংশ লোকের হাত-পা কেটে ফেলতে হয়। গত পাঁচ বছরে ৪০০ তামাক চাষি ও ধূমপায়ীর হাত-পা কেটে ফেলতে হয়েছে। তিনি বলেন, তামাক চাষ মৌসুমে সিগারেট প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি, আকিজ টোব্যাকো কোম্পানি ও ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির মাঠকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করেন। বদরগঞ্জ উপজেলার দামোদরপুর ইউনিয়নের শাহপুর ডাঙ্গারপাড় গ্রামের কৃষক সাইফুল বলেন, ব্রিটিশ-আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানির মাঠকর্মীর পরামর্শে এবং বিনা মূল্যে বীজ সরবরাহ, সার ও কীটনাশক ঋণ প্রদান, উৎপাদিত তামাক চার হাজার টাকা মন দরে কেনার প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় আলু চাষ না করে এ বছর দুই একর জমিতে তামাক চাষ করি। তামাক বিক্রি করে আমি অনেক লাভবান হয়েছি।
এদিকে রাঙামাটি জেলার বাঘাইছড়ি, বরকল, লংগদু ও বিলাছড়ি উপজেলার ফসলি জমি তামাক চাষের আগ্রাসনে মারাৎদক হুমকির মুখে পড়েছে। পাহাড়ি অঞ্চলের যেসব জমিতে আগে বিভিন্ন ফসল, ধান, শাকসবজি, তরমুজ, আলু, গম ও ভুট্টার আবাদ হতো, এসব জমি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। তামক চাষ দিন দিন গ্রাস করে নিচ্ছে এসব ফসলি জমি। পাহাড়জুড়ে এখন শুধু তামাক গাছ। সংরক্ষিত বনাঞ্চলের ভিতর, নদীর পাড় ও খালি ফসলি জমি তামাকের দখলে। ক্ষতিকারক তামাক চাষ বেড়ে যাওয়ায় আগের তুলনায় ১০ গুণ খাদ্যশস্য উৎপাদন কমেছে। তাই পাহাড়ে দিন দিন খাদ্য সংকট প্রকট হয়ে উঠছে। তবে রাঙামাটি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরে রাঙামাটির চার উপজেলা মিলে ২৬৫ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। বাঘাইছড়ি উপজেলা সদর, মারিশ্যা, মাস্টারপাড়া, মাদ্রাসাপাড়া, বটতলী, উলুছড়ি, লাল্যাঘোনা ছড়া, তুলাবান, শিলকাটা ছড়া, ঢেবাছড়ি, দুরছড়ি, খেদারমারা, পাবলাখালী, রুপকারী মগবান, করেঙ্গাতলী, বাঘাইহাট, শিজক, কচুছড়ি, মোরঘোনাছড়া, সারোয়াতলী মহিষপয্যা, খাগড়াছড়ি, আমতলী ও মাহিল্যা এলাকায় পুরোদমে তামাক চাষ হচ্ছে। পাহাড়ের আরেক জেলা বান্দরবানে প্রশাসনের উদাসীনতায় পরিবেশবিধ্বংসী তামাকের আগ্রাসন উদ্বেগজনক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। তামাকের আগ্রাসন থেকে মাঠ-ঘাট, ফসলি জমি, নদীর চর ও দুই পার, সংরক্ষিত বনাঞ্চল, উপজেলা ও থানা প্রশাসনের জমিসহ কোনো কিছুই বাদ যাচ্ছে না। ফলে এখানকার সবুজাভ পরিবেশ, পাহাড়-মাটি, নদী-খাল ও প্রাণীবৈচিত্র্যে বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। পাশাপাশি তামাক চাষে সংশ্লিষ্টরাও নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। কিন্তু প্রশাসন নীরব। বান্দরবানের লামা উপজেলায় মোট ১০ হাজার ১১৬ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে, উপজেলায় তামাক চাষ হয়েছে মাত্র ১ হাজার ১৪৯ হেক্টর জমিতে। বাস্তবে মাতামুহুরী নদীর চর, পাড়সহ ৮ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে তামাক চাষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। লামা বন বিভাগের বমু সংরক্ষিত বনাঞ্চল, পৌর এলাকার লাইনঝিরি, কলিঙ্গাবিল, রূপসীপাড়া ইউনিয়নের শীলেরতুয়া এলাকা, উপজেলা ও থানা প্রশাসনের জমিসহ মাতামুহুরী নদীর বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে, এসব জমিতে ব্যাপক হারে তামাকের আবাদ হয়েছে। কোনো ধরনের সবজি কিংবা বোরো আবাদ চোখে পড়েনি। যেদিকে চোখ যায় শুধু তামাক আর তামাকের আবাদ। তামাক চাষি নুরুজ্জামান বলেন, মৌসুমের শুরুতেই তামাক কোম্পানিগুলো চাষিদের আগাম অর্থসহ সার্বিক সহযোগিতা করে থাকে। আবার উৎপাদিত তামাক একত্রে টাকা দিয়ে কোম্পানিই কিনে নেয়। এসব সুবিধার কারণে তামাক চাষে বেশি আগ্রহী হন তারা। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শফিউর রহমান মজুমদার জানিয়েছেন, তামাক শোধনের সময় নির্গত নিকোটিনের কারণে এলাকার লোকজন হাঁপানি, কাশি, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। শুধু রাঙামাটি জেলায় নয়, সিগারেট প্রস্তুতে ব্যবহৃত ভার্জিনিয়া তামাকের সিংহভাগই উৎপাদিত হয় কুষ্টিয়ায়। বৃহত্তর কুষ্টিয়া তথা মেহেরপুর, কুষ্টিয়া ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় তামাক চাষের ইতিহাস বেশ পুরনো। ১৯৭৬-৭৭ সালের দিকে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলায় সর্বপ্রথম তামাকের আবাদ শুরু হয়। তখন ব্রিটিশ টোব্যাকো কোম্পানি (বিটিসি) নামের একটি বহুজাতিক কোম্পানি কৃষকদের কাছ থেকে তামাক কিনত। কিন্তু এখন আরও অনেক প্রতিষ্ঠান তামাক কেনায় এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো কোম্পানি (বিএটিবি), ঢাকা টোব্যাকো কোম্পানি ও আবুল খায়ের বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান উবিনীগের ‘তামাকের স্বাস্থ্যঝুঁকি’ শীর্ষক এক গবেষণা ফলাফলে বলা হয়েছে, তামাক চাষি পরিবারের শিশু, গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মা মারাৎদক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে রয়েছেন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর রংপুর আঞ্চলিক কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক মুজিবুল হক মিয়া বলেন, কৃষি বিভাগ তামাক চাষের ব্যাপারে কোনো খোঁজ রাখে না। পরামর্শও দেওয়া হয় না। তবে খোঁজ নিয়ে জেনেছি, ২০১৩ সালে রংপুর, নীলফামারী ও লালমনিরহাট জেলায় ৩২ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছিল। ২০১৪ সালে তামাক চাষ হয়েছে ৩৮ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সিগারেট কোম্পানিগুলো তামাক চাষে উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি অধিক মুনাফার লোভ দেখানোর কারণেই তামাক চাষের ব্যাপকতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata
কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ